কিডনি সুরক্ষায় দশ টিপস
কিডনি সুরক্ষায় দশ টিপস
কিডনি আমাদের শরীরের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রতিদিন কিডনি রক্ত পরিশোধন করে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন ও অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। কিন্তু অনেকেই কিডনির যত্ন নিতে অবহেলা করেন, যার ফলে কিডনি রোগ , কিডনি ফেইলিউর বা কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সূচিপত্র
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
কিডনি সুস্থ রাখার প্রথম শর্ত হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা। দিনে অন্তত ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করলে কিডনি সহজে টক্সিন বের করতে পারে এবং প্রস্রাব পাতলা থাকে। ঘন প্রস্রাব কিডনিতে পাথর তৈরি করে। তাই কিডনি সুরক্ষায় দশ টিপস-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো সারাদিন পর্যাপ্ত পানিপান করা।
সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
কিডনির জন্য সুষম খাদ্য অপরিহার্য। বেশি শাকসবজি, ফলমূল, গোটা দানা খাবার এবং কম ফ্যাটযুক্ত প্রোটিন গ্রহণ করুন। অতিরিক্ত লাল মাংস ও তৈলাক্ত খাবার কিডনির উপর চাপ বাড়ায়। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা কিডনি সুরক্ষার অন্যতম টিপস।
লবণ ও অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার কমান
অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ায়, যা কিডনির ক্ষতি করে। এছাড়া প্যাকেটজাত খাবার, চিপস, আচার, প্রক্রিয়াজাত মাংসে সোডিয়াম ও ফসফেট থাকে যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই কিডনি সুরক্ষায় দশ টিপস মেনে চলতে হলে লবণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
ডায়াবেটিস ও হাই ব্লাড প্রেশার কিডনি ক্ষতির প্রধান কারণ। নিয়মিত চেকআপ করুন, প্রয়োজনে ওষুধ নিন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন। কিডনিকে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ রাখতে এই টিপস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন
হালকা দৌড়, হাঁটা, সাইক্লিং বা যোগব্যায়াম কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়। প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ডায়াবেটিস ও হাইপ্রেশারের ঝুঁকি কমে যায়। তাই কিডনি সুরক্ষায় দশ টিপস-এর মধ্যে ব্যায়াম অপরিহার্য অংশ।
অতিরিক্ত ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন
অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক (Painkillers – NSAIDs), স্টেরয়েড বা যেকোনো ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বেশি দিন খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। স্বেচ্ছায় ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন
ধূমপান ও অ্যালকোহল কিডনির রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কিডনির ফিল্টারিং ক্ষমতা কমায়। এগুলো শুধু কিডনি নয়, হার্ট ও লিভারের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এগুলো সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলাই কিডনি রক্ষার অন্যতম টিপস।
প্রস্রাব চেপে না রাখা ও ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন প্রতিরোধ করুন
অনেকেই দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখেন, যা মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটায়। বারবার ইউটিআই হলে তা কিডনিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রস্রাব চেপে না রাখা, পর্যাপ্ত পানি খাওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা কিডনি সুরক্ষার জন্য জরুরি।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
রুটিন চেকআপ (Blood Sugar, Blood Pressure, Urine Test, Serum
Creatinine) করলে কিডনি সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ হয় এবং কিডনিকে দীর্ঘদিন সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হয়।
মানসিক চাপ কমান এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
অতিরিক্ত স্ট্রেস ও ঘুমের অভাব শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা কিডনির ওপর চাপ ফেলে। তাই নিয়মিত বিশ্রাম, ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ কিডনি সুস্থ রাখার অন্যতম টিপস।
উপসংহার
কিডনি আমাদের শরীরের পরিশোধনকারী যন্ত্র। এটিকে সুস্থ রাখতে হলে দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম মানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরোক্ত কিডনি সুরক্ষায় দশ টিপস মেনে চললে কিডনির সুস্থতা অনেকাংশে বজায় রাখা সম্ভব। পর্যাপ্ত পানি পান, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, লবণ কমানো, ব্যায়াম, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান-অ্যালকোহল পরিহার, প্রস্রাব চেপে না রাখা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা – এই দশটি অভ্যাস কিডনি রক্ষার ঢাল হিসেবে কাজ করবে। মনে রাখবেন, কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে প্রতিস্থাপন বা ডায়ালাইসিস ছাড়া বিকল্প নেই। তাই আজ থেকেই কিডনি সুরক্ষায় দশ টিপস মেনে চলুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url