রাত জাগা পাখিদের জন্যঃ বিশেষ সতর্কবার্তা
রাত জাগা পাখিদের জন্যঃ বিশেষ সতর্কবার্তা
সৃষ্টিকর্তা রাতকে নিদ্রা বা বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করলেও আমরা অনেকেই রাত্রি জাগরণ করি । রাত্রি জাগরণ কারো নেশা ,কারো পেশা। কেউ জাগে সুখে কেউ অসুখে।কেউ রাত্রি জাগরণ করে প্রেয়সীর দূরত্ব ঘোচাতে কেউবা অনলাইনে বসে টাকা কামাতে । মোট কথা কারণে অকারণে আমরা নানা ভাবেই রাত্রি জাগরন করে থাকি। কিন্তু এবার রাত্রি জাগরনের ক্ষেত্রে পাওয়া গেল বিশেষ সতর্কবার্তা।
পুরো লেখাটি পড়লে জানতে পারবেন গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু । নিচে রাত জাগার ক্ষতিকর দিকসমূহ বিস্তারিত তুলে ধরা হলো ।
পোষ্ট সুচীপত্রঃ
- জেনেনিন রাত জাগার ক্ষতিকর দিক সমূহ
- অহেতুক রাত্রি জাগরণঃ ইসলামে বারণ
- খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্রামের গুরুত্ব
- হিন্দু ধর্মে বিশ্রামের গুরুত্ব
- পরিশেষে ঃ বাস্তবতা
জেনেনিন রাত জাগার ক্ষতিকর দিক সমূহ
ডাক্তার ও বৈজ্ঞানিকদের মতে রাত্রি জাগরণ বা অপর্যাপ্ত ঘুম মানুষের শরীর ও মন দুটোর উপরই ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে -
কেননা ঘুম হলো মানুষের শরীরের কোষগুলো পুনর্গঠনের সময়। ঘুম কম হলে শরীরের কোষ ঠিকভাবে পুনর্গঠিত হয় না। ঘুম মানুষের হরমোন ব্যালেন্স করতেও সহায়ক ভূমিকা রাখে ( বিশেষত মেলাটেনিন ও কাটিসল )
যে কারণে ব্যক্তির মাঝে হতাশা, উদ্যেগ, রাগ ইত্যাদি বেড়ে যায়। ঘুমের অভাবে মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
এছাড়া মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। রোগের সাথে লড়াই করার জন্য শরীর সক্ষম থাকেনা এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুনে বেড়ে যায়।
আর বুুড়িয়ে যাওয়ার সমস্যা তো আছেই; কারণ যখন মানুষের শরীরের শারীরিক সক্ষমতা কমতে থাকে তখন চেহারায় পড়ে তার নীতিবাচক প্রভাব । চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরতে থাকে, ত্বক ক্লান্ত দেখায়।
অহেতুক রাত্রি জাগরণঃ ইসলামে বারণ
ইসলাম ধর্মেও অহেতুক রাত্রি জাগরণে করা হয়েছে নিরুৎসাহিত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাজ না থাকলে এশার পর পরই ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য বলতেন। পবিত্র কোরআনে কারিমে ঘুমকে রহমত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর আমি তোমাদের ঘুমকে করেছি বিশ্রামের মাধ্যম।” সূরা আন নাবা 78.9। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত জেগে ইবাদত করলেও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমের গুরুত্ব প্রদান করতেন।
খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্রামের গুরুত্ব
খ্রিস্ট ধর্মেও বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ,আর সপ্তম দিন বিশ্রাম নিয়েছেন । এটি বিশ্রামের গুরুত্ব কে বুঝায়। ঘুম ও বিশ্রাম খ্রিস্টধর্মে পরিপূর্ণ জীবনের অংশ । তাই খৃষ্ট ধর্মে পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম।
হিন্দু ধর্মে বিশ্রামের গুরুত্ব
হিন্দু ধর্মেও অহরনিসি ব্যস্ততা বা বিশ্রামহীন জীবনকে ত্যাগ করতে বলা হয়। হিন্দু ধর্মে ঘুম কে জীবনী শক্তির উৎস হিসেবে পরিগণিত করা হয়। সেখানে খুব বেশি ঘুম বা খুব কম ঘুম দুটোই অপ্রশংসনীয় হিসেবে বিবেচিত।
হিন্দু শাস্ত্রমতে সকালে ব্রাহ্মণ্য মুহূর্তে ওঠা এবং রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম । শ্রীকৃষ্ণ বলেন- যে ব্যক্তি অতিরিক্ত ঘুমায় বা খুব বেশি জাগ্রত থাকে তার পক্ষে যোগ বা আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্ভব নয়। (গীতা 6.16)
পরিশেষে ঃ বাস্তবতা
লক্ষ্য করলে দেখবেন, পূর্ণ ঘুম না হলে পর দিনের কাজ, পারস্পরিক সম্পর্ক , সিদ্ধান্ত গ্রহন সহ নানা কিছুতে নীতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে। পেশাগত ক্ষেত্রে যারা নিয়মিত রাত জাগে তারা কর্মস্থলে মনোযোগ হারায় ও ভুল করে বেশি। এমনকি রাত্রিকালিন জীবনধারা ও পরিবারিক- সামাজিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় । কারণ অধিকাংশ মানুষ দিনের বেলা সক্রিয় থাকে ।
তাই সকলের অবগতিতে রাখা একান্ত প্রয়োজন যে, রাত্রি জাগরণ সাময়িক প্রয়োজনীয়তা হতে পারে, তবে তা নিয়মিত অভ্যাস হিসেবে বৈজ্ঞানিকভাবে, ধর্মীয়ভাবে ও যৌক্তিক বিচারে মারাত্মক ক্ষতিকর ও সুস্থ , ভারসাম্যপূর্ণ , ও পূর্ণাঙ্গ জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি । সুতরাং নিয়ম তান্ত্রিক ও পর্যাপ্ত ঘুম সকলের জন্য অপরিহার্য ।।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url