চুল পড়া বন্ধ করার সেরা উপায়ঃ চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

 চুল পড়া বন্ধ করার সেরা উপায় 

চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন 



চুল আমাদের সৌন্দর্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। লম্বা ঘন কালো চুল আমাদের সকলেরই প্রত্যাশা। কিন্তু বর্তমানে নারী-পুরুষ সকলে চুলের নানান রকম সমস্যায় জর্জরিত। কারো চুলে ড্যানড্রাফ, কারো বা ভেঙে যাওয়া সমস্যা আবার কারো চুল অত্যন্ত রুক্ষ। সবিশেষ চুল পড়ে গিয়ে মাথায় টাক পড়ার চিন্তায় অনেকেই পেরেশান…





কিন্তু আজ আমি জানাবো, এই সকল সমস্যা হতে মুক্তির এক পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন। ব্লগটি পূর্ণাঙ্গ পড়লে আপনি জানতে পারবেন চুলের সমস্যার কারণসমূহ এবং তার ঘরোয়া, প্রাকৃতিক ও চিকিৎসাগত অনন্য সমাধান। চলুন তাহলে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।


পোস্ট সূচি পত্রঃ


চুলের নানান রকম সমস্যাঃ

নারীর ঘন কালো কেশ পুরুষের অন্যতম আকর্ষণ তো বটেই, পুরুষের ঘন কালো কেশও মেয়েদের প্রায়োরিটির তালিকায় থাকে শীর্ষে। কিন্তু এই চুল যখন স্বাস্থ্য হারায়- খুশকি, রুক্ষতা ও অকালপক্কতায় তার সৌন্দর্য হারায়। দৈনিক ঝরতে থাকে নারী বা পুরুষের চুল। তখন সর্বপ্রথম তা প্রভাব ফেলে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসে। অথচ সময় মতো ব্যবস্থা নিলে এ সকল সমস্যা হতে সহজেই প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। বিশেষতঃ টাক পড়ার আশঙ্কা হতে নিস্তার পেতে পারেন অনায়াসে।


চুল পড়ার কারণ সমূহঃ


নারী পুরুষ উভইয়ের-ই চুল পড়ে। চুল পড়ার পিছনে থাকতে পারে বিভিন্ন কারণ, যেমনঃ

  • ক) ব্যক্তি নিজেঃ  হ্যাঁ মানব শরীরের বেশিরভাগ সমস্যার প্রধান কারণ ভুক্তভোগী নিজেই হয়ে থাকে। শরীরের প্রতি অবহেলা আর সময় মত প্রতিকারে উদ্যোগী  না হওয়াই মানব শরীরের যেকোনো সমস্যার প্রধান ও অন্যতম কারণ।


  • খ) হরমোন জনিত সমস্যাঃ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা চুল পড়ার অন্যতম কারণ বিশেষত থাইরয়েড ও এন্ড্রজেন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অস্বাভাবিকভাবে চুল পড়তে পারে।


  •  গ) জেনেটিক সমস্যাঃ বংশের ধারা অনুযায়ী অনেক সময় অনেকের চুল পাতলা হতে দেখা যায়। বাবা -দাদা বা মা- খালার চুল পাতলা হলে তার প্রভাব পড়তে পারে এটাকেই জেনেটিক সমস্যা বলে।


  • ঘ)হিটিং টুলস বা ক্যামিকেলের অতিরিক্ত ব্যবহারঃ অনেকেই চুলে কালার করেন ,স্টেটনার ব্যবহার করেন অথচ চুলে অতিরিক্ত কেমিক্যাল বা হিটিং টুলস এর ব্যবহার বর্তমান সময়ে চুল নষ্টের অন্যতম কারণ।


  • ঙ)অপুষ্টিতে থাকাঃ যখন শরীরের পর্যাপ্ত প্রোটিন, আয়রন ও ভিটামিন ডি ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর ঘাটতি দেখা যায় তখন চুল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঝরতে থাকে।


  •  চ) মানসিক চাপ বা স্ট্রেসঃ মানসিক চাপ মানুষকে ভিতর থেকে ধ্বংস করে ফেলে ।এমনকি মানুষিক চাপ চুলের গোড়ায় পর্যন্ত প্রভাব ফেলে চুল ঝরে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।


সমস্যা সমাধানে প্রাকৃতিক উপাদানঃ

 চুলের সমস্যার সমাধানে প্রাকৃতিক কিছু উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন অলিভ অয়েল,নারিকেল,আমলকি,মেথি, অ্যালোভেরা,পেয়াজ ইত্যাদি। এগুলোর সঠিক ব্যবহার

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে বিশেষ কার্যকরী। আসুন এবার নিচে আমরা এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে অবগত হইঃ

চুল পড়া বন্ধের ঘরোয়া উপায়ঃ

ঘরোয়া ভাবে এসব উপায় নিয়মিত অনুসরণ করলে চুল পড়া সহ চুলের বিভিন্ন সমস্যা অনায়াসেই কমানো যায়। যেমনঃ-

  • ক)তৈল মর্দন / তেল মালিশঃ প্রতিদিন সম্ভব না হলেও অন্তত সপ্তাহে তিন দিন নারিকেল তেলে আমলা ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে ভালোভাবে মাথায় মালিশ করুন। প্রতিটি চুলের গোড়ায় এই মিশ্রণটি পৌঁছে দিন। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং চুলের গোড়া মজবুত করতে সহযোগিতা করবে।
  •  খ )পেঁয়াজের রসঃ চুলের যত্নে পেঁয়াজের রস অত্যন্ত কার্যকর। এতে আছে সালফার যা চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করে। তাই মাঝে মধ্যে পেঁয়াজের রস স্ক্যাল্পে ২০/ ২৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

  • গ)অ্যালোভেরা জেলঃ নানান কাজে বেশ উপকারী । এটি মাথার ত্বকে লাগালে মাথা ঠান্ডা রাখে। খুশকি মুক্ত করতে সহযোগিতা করে এবং চুল পড়া রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মাঝেমধ্যে এটির ব্যবহার চুলের যত্নে বিশেষ উপযোগী।

  • ঘ )মেথি বীজঃ মেথি বীজ ব্যবহারের নিয়ম হলো, এক থেকে দুই চামচ মেথি বীজ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পেস্ট করে মাথায়  লাগাতে হবে। এবং ৩০-৪০ মিনিট পর ভালো কোনো শ্যাম্পু দিয়ে মাথা পরিষ্কার করে নিতে হবে। এটি চুল ঘন করে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।


চুলের যত্নে খাদ্যাভ্যাস ও লাইফ স্টাইলঃ


চুলের যত্নে খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তাই খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই পালনীয় যেমনঃ-


  • ক )পানি পর্যাপ্ত পান করুনঃ প্রতিদিন অন্তত আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করা শরীর ও চুল দুটোর জন্যই খুব উপকারী।
  •   
  • খ)প্রোটিনযুক্ত খাবারঃ ডিম, ডাল, মুরগির মাংস, মাছ সহ নিয়মিত প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। এটি মানব শরীর ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।

  • গ)ভিটামিন ও মিনারেলঃ ভিটামিন ডি, বায়োটিন, আয়রন ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার এক্ষেত্রে খুব কার্যকর।
  •  
  • ঘ)পর্যাপ্ত ঘুমঃ চুলের যত্নে খাদ্যাভ্যাসের সাথে সাথে লাইফস্টাইলও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে বয়স ভেদে দৈনিক ৬/৮ ঘন্টা বা পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য

  • ঙ)স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণঃ দেহ -মন বা চুল, সর্বোপরি ব্যক্তির পূর্ণ সুস্থতার জন্য অবশ্যই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এ রাখতে হবে। দৈনিক সকালে ইয়োগা বা মেডিটেশন সে ক্ষেত্রে খুব উপযোগী।


চুলের যত্নে চিকিৎসাগত পন্থা


যদি চুল পড়া এতটাই অতিরিক্ত হয় যে ঘরোয়া উপাইয়েও তা কমানো সম্ভব না হয় ।তাহলে অবশ্যই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। নিচে কিছু চিকিৎসা গত পন্থা উল্লেখ করা হলোঃ-


ক) Minoxidil লোশন বা ফোমঃ এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের গ্রোথ বাড়াতে বিশেষ কার্যকরী


খ) Biotin supplements - ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এটি খাওয়া যেতে পারে 


গ)PRP therapy - (Platelet rich plasma:) এটি এক আধুনিক চিকিৎসা  পদ্ধতি। যা নিজের রক্ত থেকে Plasma নিয়ে মাথায় ইনজেকশন এর মাধ্যমে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।




চুলের যত্নে শেষ কথা


সমস্যা আছে যার, সমাধান আছে তার। সব সমস্যারই সমাধান সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা ও ধৈর্য । ঘরোয়া প্রচেষ্টা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস , এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ----

এই তিনটি একত্রে অনুসরণ করলে আশা করা যায়, চুলের যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব, মনে রাখবেন শুধু বাহ্যিক যত্নই সবকিছু নয় , বরং সেই সাথে অভ্যন্তরীণ পুষ্টি অর্জনও খুব জরুরী





আপনার যদি নির্দিষ্ট কোন চুলের সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা পরবর্তী ব্লগে তা নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ ।








এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url